প্রকাশিত:
২৫ আগষ্ট ২০২৪, ১৩:২৩
‘যহন হুনছি ভাঙ্গা পড়ছে, তহন আমডা আর কোনো দিকে না চাইয়া এক কাপড়ে বাইর হইছি। কিচ্ছু আনতাম পারছি না।’ গতকাল শনিবার দুপুরে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার মহিষমারা এলাকায় বন্যার পানিতে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন মনোয়ারা বেগম। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্বামী ফজলু মিয়া।
ফজলু–মনোয়ারার বাড়ি মহিষমারা এলাকা থেকে দেড় কিলোমিটার ভেতরে। পানি বাড়ার খবরে তাঁরা গত বৃহস্পতিবার ঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেন। শনিবার নিজেদের বাড়ির দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন তাঁরা। তবে স্বেচ্ছাসেবকেরা তাঁদের বাড়ির দিকে স্রোত বেশি থাকায় যেতে দেননি।
মহিষমারা এলাকায় বন্যার পানিতে দাঁড়িয়ে মনোয়ারা বেগম বলছিলেন, ‘আইজ আবার আইলাম বাড়িডারে দেখতে। পোলাপাইনডি আমডারে যাইতো দেয় না। তাঁরা কয় হেয়ানো বলে অনেক হোত।’ এসব কথা বলে জোরে জোরে কাঁদছিলেন মনোয়ারা বেগম।
ফজলু মিয়া বলেন, ঘরে ছয় মণ চাল ছিলো। এগুলোই ছিল তাঁর সম্পদ। এই চালের টানে তিনি আবার বাড়িতে যেতে চান। তাঁর বিশ্বাস, এখনো তাঁর চালগুলো ভালো আছে। পানিতে ভিজেনি।
যেখানে গোমতী নদীর পাড় ভাঙছে, এর খুব কাছেই ফজলু–মনোয়ারাদের ঘর। স্থানীয় লোকজন বলেন, ওই এলাকার বাড়িঘর সব পানির নিচে। কোনো কিছুই অবশিষ্ট নেই। সব বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
ফজলু মিয়া কান্না করতে করতে বলছিলেন, তাঁর তিন ছেলে। এক ছেলে তাদের সঙ্গে থাকে। সে তরকারি বিক্রি করে। আর দুই ছেলে দূরে থাকেন। ফজলু মিয়ার তেমন আর্থিক সংগতি নেই। গত বৃহস্পতিবার রাতে গোমতী নদীভাঙার খবরে স্ত্রী মনোয়ারাকে নিয়ে এক কাপড়ে বের হন। চলে যান পাঁচ কিলোমিটার দূরের রসুলপুর গ্রামে। সেখানে শুক্রবার সারা দিন ও শনিবার সকাল পর্যন্ত ছিলেন। পরে হেঁটে হেঁটে আবার বাড়ির দিকে রওনা করেন।
ফজলু–মনোয়ারা দম্পতিকে মহিষমারা এলাকায় থামিয়ে দেন স্বেচ্ছাসেবীরা। স্বেচ্ছাসেবীদের একজন ওবায়দুর রহমান। তিনি বলেন, বাজারের পাশেই বুড়বুড়িয়ায় বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে গোমতী নদীর পাড় ভেঙে যায়। তীব্র স্রোতের কারণে সেখানে কেউ যেতে পারছে না।
উদ্ধারকারী নৌকাগুলো স্রোতের কারণে নানুয়ার বাজার ও বুড়বুড়িয়াতেও যেতে পারছে না। তাই ফজলু মিয়া ও তাঁর স্ত্রীকে সেখানে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। ওই দিকে যে স্রোত, তাঁরা এই স্রোতের সঙ্গে টিকতে পারবেন না। স্বেচ্ছাসেবকদের কথা শুনে ফিরে যান ফজলু মিয়া ও মনোয়ারা বেগম।
মন্তব্য করুন: