[email protected] শনিবার, ২৩শে নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

দ্রব্যমূল্য ঘরের শান্তি কেড়ে নিয়েছে : মির্জা ফখরুল

Abdur Rahman

প্রকাশিত:
৩ জুন ২০২৪, ১৯:৪৯

ছবি : সংগৃহীত

দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ঘরের শান্তি কেড়ে নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সোমবার (৩ জুন) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে মহিলা দলের উদ্যোগে জিয়াউর রহমানের ওপর আলোচনা অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তারা (সরকার) গত ১৫ বছরে একটা দানবের মতো শাসন করে দেশের শুধু রাজনীতিকে ধবংস করেনি, অর্থনীতিকেও ধবংস করে ফেলেছে। তার প্রমাণ দেখেন…আপনারা আমার চেয়ে ভালো বলতে পারবেন। জিনিসপত্রের দাম কেমন লাগে বলেন? ঘরে শান্তি আছে? নাই।’

তিনি বলেন, ‘গ্যাসের দাম, বিদ্যুতের দাম, সবজির দাম, চালের দাম…. অবিশ্বাস্য। খাওয়া-ধাওয়া করা যায় না, বাচ্চাদেরকে ঠিক মতো ডিম দেয়া যায় না, দুধ দেয়া যায় না। গরুর মাংস ৮শ’ টাকা, লাউয়ের দাম ১২০ টাকা…. এই তো অবস্থা।’

বাংলাদেশে পণ্যসামগ্রীর দাম অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি-সিপিডির গবেষণার কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সিপিডির এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে আজকে নিত্যপণ্যও হয়ে উঠেছে বিলসবহুল। তারা গরুর গোস্ত কেনেন না, ইলিশ মাছের তো প্রশ্নই উঠতে পারে না… তাই না। এমনকি ভালো সবজিও কেউ কেনেন না কারণ দাম বেশি।”

তিনি বলেন, ‘আর এখন সয়াবিন তেল বলেন, পাম ওয়েল বলেন… সব কিছুর দাম ভারত, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম থেকে বেশি। আমরা এমনিতেই সাধারণ মানুষ এই অবস্থায় পড়েছি। আমরা এক কঠিন সময় পার করছি...এই সময়টা তৈরি করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। যারা গত ১৫ বছর ধরে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে, পুলিশ, বিজেবি, প্রশাসনসহ অন্যান্য রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে জোর করে ক্ষমতায় টিকে আছে।’

মহিলা দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আপনারা সবাইকে বলেন, চুপ করে থাকবেন না, বের হন, কথা বলেন। সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে। এটা শুধু বিএনপির দায়িত্ব না… এই মানুষকে তার আত্মরক্ষার্থে কথা বলতে হবে তো।’

বিপ্লব ছাড়া মুক্তি নেই বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা। তিনি বলেন, ‘ঘর থেকে আমাদের নারীদের বের করে আনতে হবে। মানুষকে বের করতে হবে, সবাই যখন বেরিয়ে আসবে তখনই না বিপ্লব হবে…. সেটা আমাদের করতে হবে। আমরা শুধু আমাদেরকে নিয়ে ব্যস্ত থাকলে চলবে না।’

চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের জন্য সংগঠনকে আরও দৃঢ় করার ওপর জোর দেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘সময় এসেছে আমাদের নিজেদেরকে সংগঠিত করার। আমরা চেষ্টা করছি, নির্যাতিত হচ্ছি, জেল খাটছি, আমাদের মা-বোনেরা বার বার জেলে যাচ্ছে কিন্তু আমরা চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করতে পারিনি। এই চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের জন্য আমাদের সংগঠনকে আরও দৃঢ় করতে হবে। নিজেদের মধ্যে ছোট-খাটো ভুল-ত্রুটি যেগুলো আছে সেগুলো দূর করে ফেলেন। সবাই মিলে একসঙ্গে একজোটে নামেন।’

তিনি বলেন, ‘এটা বিএনপির সমস্যা না, এটা বাংলাদেশের সমস্যা, জাতির সমস্যা… এই জাতি ভবিষ্যতে টিকবে কি টিকবে না, আপনার ছেলে-মেয়েরা ভবিষ্যতে চাকরি পাবে কি পাবে না, স্বাধীনভাবে চলতে পারবে কি পারবে না তার পুরোটা নির্ভর করছে এই সরকারকে আপনি শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে পরাজিত করতে পারবেন কি পারবেন না। নির্বাচন করতে হলে একটা নিরপেক্ষ সরকার দরকার লাগবে। সেজন্যই আমরা লড়াই করছি, সংগ্রাম করছি।’

দেশে নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে তারা (সরকার) তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দিয়ে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করছে। এই সরকার তার অধীনে তিনটা তিনটা নির্বাচন পার করেছে। এই তিনটা নির্বাচনই প্রহসন হয়েছে।গতকাল (রবিবার) প্রধান নির্বাচন কমিশন বলছেন, এভাবে রৈবী রাজনৈতিক পরিবেশে কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ যে পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে তাতে কোনো দলই তো নির্বাচনে আসে না। ৬৩টা রাজনৈতিক দল নির্বাচন যায়নি। তাহলে নির্বাচন হচ্ছে কোথায়? সেকারণে নির্বাচন ব্যবস্থাটা ভেঙে পড়েছে।’

সরকারি দলের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু ভোট দিলে তারা দশটা আসনও পাবে না। আমি বার বার বলি, তাদেরকে বলছি, সাহস থাকলে আসেন না, আপনি নির্বাচন করেন। যেখানে নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন থাকবে। কার কত জনপ্রিয়তা বোঝা যাবে।’

মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক শাহিদা রফিক, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, পেয়ারা মোস্তফা, এ্লিজা জামান, ঢাকা মহানগর উত্তরের নায়েবা ইউসুফ, দক্ষিণের রুমা আখতার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর