প্রকাশিত:
২ ডিসেম্বার ২০২৩, ২১:৫০
পার্টির চেয়ারম্যান-মহাসচিবের অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে ২৯ নভেম্বর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান রওশন এরশাদ। তবে রওশন শিবিরের বেশ কয়েকজন নেতা নির্বাচনী মাঠে রয়ে গেছেন।
কেউ কেউ স্বতন্ত্র আবার কয়েকজন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) থেকে প্রার্থী হয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে টানা দুই সংসদে বিরোধীদলের নেতার আসনে থাকা রওশন এরশাদ প্রার্থী হননি। তার সন্তান রাহগির আল মাহি এরশাদ ওরফে সাদও এমপি নির্বাচন করছেন না বলে জানা গেছে।
জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙা রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছেন। তিনি ওই আসন থেকে ২০০১, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হন। পার্টির চেয়ারম্যানের সঙ্গে মতপার্থক্যের কারণে ২০২২ সালে তাকে দলের সকল পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তারপর থেকেই রওশন এরশাদের সঙ্গে সক্রিয় ছিলেন পরিবহন মালিক সমিতির এই নেতা। রংপুর-১ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও কাগজপত্রে বিচ্যুতির কারণে মনোনয়পত্র স্থগিতের কয়েক ঘণ্টার মাথায় বৈধ ঘোষণা করা হয়।
রওশনপন্থী নেতা ময়মনসিংহ জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কেআর ইসলাম ময়মনসিংহ-৬ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। ২০২২ সালের অক্টোবরে তাকে পার্টি থেকে বহিষ্কার করেন জিএম কাদের। রওশন এরশাদসহ তার অনুসারীদের ৩টি মনোনয়ন দিতে রাজি ছিলেন জিএম কাদের। সেই তালিকাতে ছিলেন কেআর ইসলামও। তরে রওশন এরশাদের সিদ্ধান্তে অটল থেকে জাপার মনোনয়ন গ্রহণ থেকে বিরত থাকেন কেআর ইসলাম।
অন্যদিকে পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসন থেকে চার বারের সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী স্বতন্ত্র হিসেবে লড়ছেন। জনপ্রিয় এই রাজনীতিবিদ ১৯৯৬, ২০০১, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। রওশন এরশাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে তাকে মনোনয়ন দেয়নি জাপা।
সবেচেয়ে বেশি প্রার্থী দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) থেকে। সাবেক এমপি জাফর ইকবাল সিদ্দিকী নীলফামারী-১ আসনে নোঙ্গর প্রতীকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। জাতীয় পার্টির সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য জাফর ইকবাল সিদ্দিকী ২০০৮ সালে নীলফামারী-১ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৪ সালে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান, আর ২০১৮ সালে তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়।
পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ক্বারী হাবিবুল্লাহ বেলালী ময়মনসিংহ-১০ আসনে বিএনএম এর প্রার্থী হয়েছেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজয়ী ইঞ্জিনিয়ার মামুনুর রশীদ জাতীয় পার্টির মনোনয়ন না পেয়ে বিএনএম থেকে জামালপুর-৪ আসনে প্রার্থী হয়েছেন। রওশনপন্থী নেতা শাহজামাল রানা ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ এবং মঞ্জুরুল হক সাচ্চা গাইবান্ধা-৩ আসনে বিএনএম থেকে প্রার্থী হয়েছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ঘনিষ্ঠ সাবেক প্রতিমন্ত্রী গোলাম সাওয়ার মিলন, সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খাঁন, এসএমএম আলম, সাবেক রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ্, সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী মামুনুর রশীদ, সাবেক ছাত্রনেতা ও যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজুসহ অনেকেই নির্বাচনে অংশ নেননি বলে জানা গেছে।
অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজু বলেছেন, কেউ কেউ নির্বাচন করছেন বলে শুনেছি। তারা সকলেই জনপ্রিয় নেতা, কেউ কেউ ৪ বার পর্যন্ত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এমন নেতাকেও মনোনয়ন দেননি জিএম কাদের। আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি না বলে রাজনীতি ছাড়ছি এমনটা নয়। খুব শিগগিরই নতুন কিছু দেখতে পাবেন।
নানা নাটকীয়তার মধ্যদিয়ে নির্বাচনে আসা জাতীয় পার্টি ২৯৪ আসনে দলীয় মনোনয়ন দেন। দলীয় টিকিট পেলেও ৬ জন প্রার্থী শেষ পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৮৮ আসনের বিপরীতে জাতীয় পার্টির ৩০৪ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। একই আসনে একাধিক প্রার্থী দেওয়া হয়েছে এমন আসনের সংখ্যা ১৮টি, আর চেয়ারম্যানসহ ৪ জন নেতা দু’টি করে আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বলে দফতর সূত্র জানিয়েছে।
মন্তব্য করুন: