প্রকাশিত:
২২ নভেম্বার ২০২৩, ২১:০৮
বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাতগুলোর মধ্যে খুচরা খাত অন্যতম। এই খাতকে এগিয়ে নিতে খুচরা বিক্রয় বিষয়ে মাত্র ২ মাসের প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রতিবন্ধীসহ সাড়ে ৪ হাজারের বেশি বেকার বা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর তরুণ-তরুণী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে ব্র্যাক। 'প্রোগ্রেসিং দ্যা রিটেইল সেক্টর বাই ইম্পুভিং ডিসেন্ট এমপ্লয়মেন্ট' নামক প্রকল্পের মাধ্যমে এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে সংস্থাটি।
ব্র্যাকের স্কিলস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (এসডিপি)'র মাধ্যমে সমাজে পিছিয়ে পড়া মানুষদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই সুযোগ সৃষ্টি করা হয়। এই প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে আইকেইএ ফাউন্ডেশন ও ইউবিএস অপ্টিমাস ফাউন্ডেশন।
খুচরা খাতে দেশের ৬০ লাখেরও বেশি মানুষ কর্মরত রয়েছেন। এই খাতে তরুণদের দক্ষ করে তুলতে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও সিলেটে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে ব্র্যাক।
এছাড়াও এটি বাংলাদেশের প্রথম খুচরা বিক্রয় প্রশিক্ষণ মডিউল হিসেবে সরকারের স্বীকৃতি অর্জন করেছে। এতে গত তিন বছরে প্রশিক্ষণ পেয়েছে ৫,৪০০ জন, যাদের ৬০ শতাংশ নারী এবং ৬ শতাংশ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। প্রশিক্ষিতদের ১২০ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে লিম্ব সাপোর্টসহ সহায়ক ডিভাইস প্রদান করা হয়েছে ।
বুধবার (২২ নভেম্বর) রাজধানীর একটি সনামধন্য হোটেলে ব্র্যাকের আয়োজিত তরুণদের জন্য খুচরা খাতে (রিটেইল সেক্টর) সফল ক্যারিয়ার সম্পর্কিত এক অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। সেই সঙ্গে অনুষ্ঠানে প্রশিক্ষণ পাওয়া ৭ ব্যক্তি তুলে ধরেন তাদের জীবন বদলে যাওয়ার গল্প।
এ সময় শিক্ষানবিশদের সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিকারী ১০ টি প্রতিষ্ঠানকে সন্মাননা স্মারক দেওয়া হয়।
প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে, মিনিসো, মীনা বাজার, আর্টিসান আউটফিটার্স লিমিটেড, বাটা, আমানা বিগ বাজার, ইউনিমার্ট, স্বপ্ন, স্বদেশ পল্লী, মিরর এবং অ্যাপেক্স ফুট ওয়ার লিমিটেড। তবে এই উদ্যোগের সঙ্গে ছিল ১৫০ টিরও বেশি বেসরকারি খাতের অংশীদার।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য (সমন্বয় ও অ্যাসেসমেন্ট) ও যুগ্ম সচিব আলিফ রুদাবা বলেন, বর্তমান সরকারের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য হলো বেকার তরুণ-তরুণীর জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। ব্রাক এই কাজটি করছে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিচ্ছে। আমাদের বেকারদের সবচেয়ে বড় দূর্বলতা হচ্ছে অভিজ্ঞতা ছাড়া তাদের কেউ চাকরি দিতে চায় না। কিন্তু আমাদের তরুণ-তরুণীদের দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা ছাড়াই চাকরির সুযোগ তৈরি হচ্ছে ব্র্যাকের স্কিলস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (এসডিপি)'র মাধ্যমে।
তিনি বলেন, আজ আমি এখনে যে ৭ জনকে দেখছি যারা দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা অর্জন করে ভালো ভালো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছে, তারা কত সাবলীল ভাবে আমাদের সামনে নির্ভয়ে র্নিদিধায় কথা বলছে এটাই একটা উন্নয়ন। এভাবেই কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দেশ এগিয়ে যাবে।
অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য রাখেন ব্র্যাকের স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর (সহযোগি পরিচালক) তাসমিয়া রহমান। তিনি বলেন, আমার মনে হয়েছে একটা পাইলট প্রজেক্ট তখনই সাফল্য পাবে যখন পার্টনার পাশে দাড়াবে। আমাদের এই প্রজেক্টের সাফল্যের পেছনে আমাদের পার্টনারদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
ট্রেনিংয়ের কোয়ালিটিতে আমরা কোনো কম্প্রোমাইজ করিনি। কোন প্রজেক্ট সাকসেস এর পেছনে পার্টনারশিপের কোনো বিকল্প নেই। এই প্রজেক্টে নানাভাবে অনেকে আমাদের সাহায্য করেছেন তাদেরকে ধন্যবাদ।
তিনি বলেন, স্কিল সেক্টরে ছেলে মেয়েদের উদ্বুদ্ধ করা খুব প্রয়োজন। আমাদের আরেকটু মাইন্ড ওপেন করতে হবে। স্কিল সেক্টরে ছেলেমেয়েদের উদ্বুদ্ধ করা প্রয়োজন। সবাই সরাসরি চাকরি চাই, কিন্তু সবাই তো তা পাবে না। সবাই জিরো থেকে হিরো হতে চাই, কিন্তু সঠিক প্রকৃয়ায় না এগোলে তা তো সম্ভব না।
যোগাযোগ ক্ষেত্রে উন্নয়ন করতে কথা বলার কোন বিকল্প নেই। যত বেশি কথা বলা যাবে ততোবেশি দক্ষ হবে। তাই বেশি বেশি কথা বলতে হবে। এই বিষয়ে আমাদের ছেলে মেয়েদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
এছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (এসডিএফ)-এর চেয়ারপার্সন ও অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সচিব মোঃ আবদুস সামাদ, সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচির প্রকল্প পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব ড. মোঃ আলফাজ হোসেন। ব্র্যাকের এডুকেশন, স্কিলস ডেভেলপমেন্ট, অ্যান্ড মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের পরিচালক সাফি রহমান খান, ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিনসহ প্রমুখ।
বাংলা গেজেট/এমএএইচ
মন্তব্য করুন: