প্রকাশিত:
২০ নভেম্বার ২০২৩, ২০:২৯
সরকারের পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে মহাসমাবেশ করে বিএনপি। সেদিন মহাসমাবেশ চলার সময় কাকরাইলে পুলিশ, বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, পুলিশ কনস্টেবল হত্যা, পিস্তল ছিনতাই, পুলিশের কাজে বাধা, ককটেল বিস্ফোরণ, নাশকতা, ভাঙচুর, জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি, গাড়ি পোড়ানো, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ, হত্যাচেষ্টাসহ নানা অভিযোগ ওঠে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগে পুলিশের পক্ষ থেকে অনেকগুলো মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেপ্তারের পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ শীর্ষ নেতাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আরও বিভিন্ন অভিযোগে পুলিশের তরফ থেকে নতুন করে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা হয়েছে। বিএনপির কিছু নেতাকে একটি করে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। কিছু নেতাকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্য মামলাগুলোতে এখনো গ্রেপ্তার দেখানো না হলেও আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন বিএনপির নেতাদের আইনজীবীরা। জামিন চেয়ে আদালতে আবেদন করছেন তারা। তবে, আইনজীবীরা বলছেন, এক মামলায় জামিন পেলে অন্য মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হতে পারে। সে আশঙ্কায় শীর্ষ নেতাদের জামিনের ব্যাপারে তাড়াহুড়া করছেন না তাদের আইনজীবীরা।
বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা অভিযোগ করছেন, তাদের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে একাধিক মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও সাজানো মামলা দেওয়া হয়েছে। একতরফাভাবে নির্বাচন করতেই সরকার পরিকল্পিতভাবে নেতাদের কারাগারে আটক রাখতে ফরমায়েশি মামলা দিয়েছে। একেকজনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হলেও কৌশলগত কারণে শীর্ষ নেতাদের অন্য মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে না। কারাগারে থাকায় আগাম জামিন নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
তাদের অভিযোগ, একটা মামলায় জামিন পেলে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের আরেক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে, যেন তারা কারামুক্ত হতে না পারেন। নির্বাচনের আগে পর্যন্ত সরকার এভাবেই তাদেরকে কারাগারে রেখে নির্বিঘ্নে নির্বাচন সারতে চায়। তারপরও গ্রেপ্তার দেখানোর মামলায় জামিন চেয়ে নিম্ন আদালতে আবেদন করা হয়েছে। সেখানে জামিন না পেলে হাইকোর্টে যাওয়া হবে।
গ্রেপ্তারের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ব্যারিস্টার মেজর (অব.) শাহজাহান ওমর, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মজিবুর রহমান সারোয়ার, সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক কারাগারে আটক আছেন।
এসব নেতার বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ৮ থেকে ১০টি করে মামলা রয়েছে। এর মধ্যে মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে পুলিশ কনস্টেবল হত্যাসহ আটটি মামলা হয়েছে। গত ২৯ অক্টোবর প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় রমনা মডেল থানায় করা মামলায় তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে এ মামলায় জামিন শুনানি হবে। তবে অন্য সাতটি মামলায় এখনো গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলাসহ নয়টি মামলা হয়েছে। গত ১ নভেম্বর শাহজাহানপুর থানায় দায়ের করা অস্ত্র ছিনতাই ও বিস্ফোরক আইনের মামলায় তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ড শেষে ৫ নভেম্বর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ মামলায় দায়রা জজ আদালতে জামিন আবেদন করা হয়েছে। তবে, অপর মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি।
পুলিশ কনস্টেবল হত্যা মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপনের ছয় দিনের রিমান্ড শেষে গত ৯ নভেম্বর তাদের কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। একাধিক মামলায় তারা এজাহারনামীয় আসামি হলেও তাদের এখনো অন্য মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মেজর (অব.) শাহজাহান ওমরের বিরুদ্ধে রমনা থানায় চারটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো না হলেও নিউমার্কেট থানায় দায়ের করা বাস পোড়ানো মামলায় সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে গত ৪ নভেম্বর তাকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরদিন গত ৫ নভেম্বর আদালত তার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে গত ৯ নভেম্বর তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। গত ৩ নভেম্বর অস্ত্র ছিনতাইয়ের মামলায় যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ারকে ও গত ৫ নভেম্বর প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
শামসুজ্জামান দুদুর বিরুদ্ধে নতুন করে আটটি মামলা হয়েছে। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তিন দিনের রিমান্ড শেষে গত ৯ নভেম্বর তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। বিএনপি নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, এমরান সালেহ প্রিন্স, জহির উদ্দিন স্বপন ও আমিনুল হকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হলেও অন্য মামলায় এখনো গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি।
আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ বলেছেন, ২৮ অক্টোবরের পর থেকে মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে আটটি মামলা হয়েছে। অথচ মাত্র একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বিগত দিনে দেখা গেছে, একটি মামলায় জামিন পেলে অন্য মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। বিএনপির শীর্ষ নেতারা যাতে তাড়াতাড়ি বের হতে না পারেন, তার অপকৌশল হিসেবে অন্য মামলায় এজাহারে নাম থাকা সত্বেও গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে না।
আরেক আইনজীবী মহি উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বিএনপির নেতাদের অনেকের বিরুদ্ধে তথাকথিত মামলা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে না এবং মামলা সম্পর্কে কোনো তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা ধারণা করছি, একটা মামলায় জামিন পেলে বিএনপি নেতাদের অন্য মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হতে পারে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা এক মামলায় জামিন পেলে আরেক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর কৌশল নিয়েছে পুলিশ। সে কারণে এখন বিএনপির শীর্ষ নেতাদের একাধিক গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে না। জামিন পেলেই অন্য মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে আটকে রাখতে চায় সরকার। যাতে তারা নির্বাচন করে আবারও অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসতে পারে তারা। এ ক্ষেত্রে লক্ষ করা যাচ্ছে, আইন মন্ত্রণালয় নিম্ন আদালতকে নিয়ন্ত্রণ করছে। সূত্র: রাইজিংবিডি
বাংলা গেজেট/এমএএইচ
মন্তব্য করুন: