প্রকাশিত:
৩ নভেম্বার ২০২৩, ১৫:০৪
‘প্রত্যেক মাসে আমার দুই থেকে তিন কেজি পেঁয়াজ লাগে। কিন্তু পেঁয়াজের যা দাম, ১০-১২ দিন আগে হাফ কেজি কিইনা দিছিলাম। সেইডা দিয়াই বউরে চালাইতে কইছি। ১৪০-১৫০ ট্যাকা দিয়া পেঁয়াজ কেনার সাধ্য আমাগো নাই। উপায় না পাইয়া এখন কমদামি পেঁয়াজ কিনতে আইছি।'
বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) রাজধানীর সবুজবাগ এলাকায় ভ্যান থেকে পেঁয়াজ কেনার সময় কথাগুলো বলছিলেন কর্মজীবী আনিসুল হক।
শুধু আনিসুলই নয়, প্রত্যেকটা নিম্নবিত্ত মানুষের অবস্থাই এমন। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। ভালো নেই মধ্যবিত্তরাও। খরচের লাগাম টানতে তাদেরও অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে তারাও ভ্যানের কমদামি পণ্য কিনছেন।
সবুজবাগ ছাড়াও বৃহস্পতিবার বিকেল ও শুক্রবার সকালে রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে ক্রেতাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা গেছে। তারা জানান, যা বেতন পান তা নিয়ে সংসার চালানো অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বহু কাঁটছাট করেও সংসার চালাতে পারছেন না তারা।
মালিবাগ বাজারে দেখা যায়, দেশি জাতের পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৫০ টাকা দরে। ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকা দরে। কিছু নিম্নমানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা দরে।
বৃহস্পতিবার রাতে মুগদা মেডিকেলের সামনে ফুটপাতে ভ্যানে করে এক পেঁয়াজ বিক্রেতা কিছু নিম্নমানের পেঁয়াজ ১০০ টাকা দাম চান। তখন সঙ্গে সঙ্গে অনেকে ঘিরে ধরেন। তাদের মধ্যে দিনমজুর থেকে চাকরিজীবী মানুষকেও দেখা যায়।
এসময় এক নারী ক্রেতা বলেন, দেশি পেঁয়াজ ১৪০ টাকা চাচ্ছে। বাধ্য হয়ে এই আধাপচা পেঁয়াজ কিনছি। এইটা দিয়েই কয়েকদিন চলতে হবে। কবে পেঁয়াজের দাম কমবে কে জানে।
কথা প্রসঙ্গে ওই বিক্রেতা বলেন, ‘এর আগে এক গাড়ি দেশি পেঁয়াজ আনছিলাম। বেচতে অনেক সময় লেগেছে। এখন যে পেঁয়াজ বেচতেছি, তা এক দিনেই শেষ হয়ে যায়। বেশি দামি পেঁয়াজ খাইতে চায় না মানুষ।’
মগবাজার, মধুবাগ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে দেশি ও আমদানি করা পেঁয়াজের দাম আরেক দফা বেড়েছে। প্রতি কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়।
দীর্ঘদিন ধরেই লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজার। তেল আলু থেকে শুরু করে সব পণ্যের বাজার উর্ধ্বগতি। দফায় দফা দাম বেড়ে যাওয়ায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর জরুরি তিনটি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের আলোকে আলুর সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৩৫-৩৬ টাকা, দেশি পেঁয়াজের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৬৪-৬৫ টাকা আর ডিমের পিস সর্বোচ্চ ১২ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।
সরকার যেদিন দাম নির্ধারণ করে দেয় সেদিন থেকে আরও বাড়তে থাকে এসব পণ্যের বাজার। ৬৫ টাকার পেঁয়াজ বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুণেরও বেশি দামে। দাম বেঁধে দেওয়ার পরে সেই দাম কার্যকর না হওয়ার বাজার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
বাংলা গেজেট/এমএএইচ
মন্তব্য করুন: