[email protected] মঙ্গলবার, ২৬শে নভেম্বর ২০২৪, ১১ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

মিলছে না মাংস আমদানির অনুমতি

অর্থনীতি ডেস্ক

প্রকাশিত:
২১ অক্টোবার ২০২৩, ১৯:৫৯

ফাইল ছবি

বাড়তি দামের কারণে ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে গরু-মহিষের মাংস। ধাপে ধাপে দাম বেড়ে এখন গরুর মাংসের দাম ঠেকেছে ৮০০ টাকায়। দাম বেড়েছে মহিষের মাংসেরও। এমন বেসামাল বাজার ব্যবস্থাপনার মধ্যে মাংস আমদানি করে দামে স্বস্তি ফেরাতে চায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে সে প্রস্তাবে সায় দেয়নি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি অনুবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গরুর মাংসের দাম ক্রেতার নাগালে আনতে আমদানির অনুমতি চেয়েছে ইন্ডিয়া বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (আইবিসিসিআই)। ভারত থেকে মহিষের মাংস আমদানির অনুমতি চায় সংগঠনটি। এক্ষেত্রে ভোক্তাদের ৫০০ টাকায় মাংস সরবরাহের কথা জানিয়েছেন তারা।

তবে আমদানি নীতিমালা (২০২১-২০২৪) অনুযায়ী, মাংস আমদানির ক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পূর্বানুমতি প্রয়োজন।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্র বলছে, সম্প্রতি ভারত থেকে ৪ হাজার মেট্রিক টন মহিষের মাংস ও অফাল (কলিজা, মাথা ও নাড়িভুঁড়িসহ অন্যান্য বর্জ্য) আমদানির অনুমোদন চেয়েছে নাসির অ্যান্ড সন্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান। পরে এ বিষয়ে মতামত চেয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। নিয়মানুযায়ী আবেদনটি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে পাঠানো হয়। তবে অন্যান্যবারের মতো এবারও অধিদপ্তর এ বিষয়ে কোনো ইতিবাচক মতামত দিচ্ছে না।

‘চিঠি দিলেও বরাবরই মাংস আমদানির বিষয়ে আমাদের সম্মতি ছিল না বা থাকবেও না। এখনো বলছি, আমরা মাংসে স্বয়ংসম্পূর্ণ। রপ্তানি করবো এখন। প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘বেঙ্গল মিট’ মাংস রপ্তানি করতেই পারে। কিন্তু আমরা তো সরকারিভাবেও করতে চাচ্ছি। এজন্য আমাদের কিছু কার্যক্রমও আছে।’

মাংস আমদানির অনুমোদন চেয়ে নাসির অ্যান্ড সন্স তাদের চিঠিতে জানিয়েছে, তাদের প্রতিষ্ঠান সুনামের সঙ্গে ভারত থেকে গত এক বছর ধরে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের (বিএফএসএ) নিয়ম এবং কোল্ড চেইন মেনে মহিষের মাংস ও অফাল ব্যবসা করে আসছে। দেশের বিভিন্ন রেস্তোরাঁ এবং ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দিয়ে আসছে। নতুন আমদানি নীতিমালা অনুযায়ী মাংস আমদানির ক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পূর্বানুমতি প্রয়োজন হয়। ফলে যথাসময়ে আমদানির পূর্বানুমতি না পেলে এবং ঋণপত্র (এলসি) খুলতে না পারলে প্রতিষ্ঠান ক্রেতা হারাবে এবং বাজারে আমদানি করা মাংসের ঘাটতি দেখা দেবে। এক্ষেত্রে ভারতের এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড প্রসেসড ফুড প্রডাক্টস এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (এপিইডিএ) রেজিস্টার্ড প্রতিষ্ঠান থেকে চার হাজার মেট্রিক টন মহিষের মাংস ও অফাল আমদানির অনুমতি চায় নাসির অ্যান্ড সন্স।

নামপ্রকাশ না করা শর্তে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, এর আগেরও মাংস আমদানির বিষয়ে মতামত চেয়ে আমাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রতিবারই আমাদের মতামত নেতিবাচক। এবারও ব্যতিক্রম নয়। দেশীয় উৎপাদকদের সুরক্ষা দিতেই আমরা এ নীতি নিয়েছি। শিগগিরই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে নেতিবাচক মতামতটি জানিয়ে দেওয়া হবে।

এর আগে বাংলাদেশে হালাল মাংস রপ্তানিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে মেক্সিকোর ব্যবসায়ীরা। সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে মেক্সিকোতে আয়োজিত এক সেমিনারে তারা এ আগ্রহ প্রকাশ করেন।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেছেন, বিদেশ থেকে গরুর মাংস আমদানি করলে দেশে তা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা সম্ভব। তবে, দেশীয় উৎপাদকদের সুরক্ষা দিতে গরুর মাংস আমদানি করা হচ্ছে না। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা থেকে গরুর মাংস আমদানি করা গেলে ভোক্তারা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজিতে গরুর মাংস খেতে পারবেন। এখন হয়তো ৮০০ টাকায় তাদের এ মাংস কিনতে হচ্ছে। কিন্তু এটা (বাড়তি দামের দায়) ভোক্তাদের ওপর দেওয়া হচ্ছে দেশীয় উৎপাদনকারীদের সুরক্ষা ও সহযোগিতা করার জন্য। ডিম, মুরগিসহ অনেক পণ্যের ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যায়।

অরগানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ওইসিডি) তথ্যমতে, সবচেয়ে বেশি গরুর মাংস খাওয়া হয় যুক্তরাষ্ট্রে। তবে মাথাপিছু গরুর মাংস খাওয়ায় এগিয়ে আর্জেন্টিনা। গরুর মাংস বেশি খাওয়ার পাশাপাশি উৎপাদনেও এগিয়ে যুক্তরাষ্ট্র। তবে উৎপাদনের হিসাব অনুযায়ী শীর্ষ ৪০ দেশের তালিকাতেও নেই বাংলাদেশের নাম।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, নানান পদক্ষেপের ফলে দেশ মাংস ও ডিম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে এবং মাংস ও মাংসজাত পণ্য বিদেশে রপ্তানি শুরু হয়েছে। বর্তমানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় দুই কোটি মানুষ ও ৫ লাখ পরিবার গবাদি পশু পালন কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। ফলে অন্য দেশ থেকে মাংস আমদানি দেশের প্রাণিসম্পদের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করবে।

‘প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ অনুযায়ী মাংস আমদানি বন্ধ আছে। সেজন্য কাউকে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় যদি মনে করে মাংস আমদানি করা দরকার, আমরা অনুমতি দেবো।’

মাংস আমদানির বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য (আইআইটি) অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. রুহুল আমিন জাগো নিউজকে বলেন, মাংসের বিষয়ে মূলত প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মতামত অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এমনিতে মাংস আমদানির বিষয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। কিন্তু প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ অনুযায়ী মাংস আমদানি বন্ধ আছে। সেজন্য কাউকে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় যদি মনে করে মাংস আমদানি করা দরকার, আমরা অনুমতি দেবো। মাংস আমদানির বিষয়ে মতামত চেয়ে আমরা আগেও চিঠি দিয়েছিলাম। আমাদের দেশের চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন কত, সে অনুযায়ী আমদানির বিষয়টি বিবেচনাযোগ্য কি না, মতামত চেয়েছি। সেটা আগেও দুই-তিনবার দিয়েছি।

তিনি বলেন, সর্বশেষ প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, আমাদের দেশে যে পরিমাণ উৎপাদন হয় তা চাহিদার চেয়েও বেশি। সুতরাং খামারিদের স্বার্থে মাংস আমদানি না করার বিষয়ে মতামত দিয়েছিল তারা। দেশে দশ-পনের বছর আগে ভারত থেকে যে পরিমাণ গরু আসতো বিশেষ করে কোরবানির ঈদে, এখন সেটি দরকার হচ্ছে না। এখন ঘরে ঘরে দুই-চারটা গরু আছে। বড় খামারি যেমন তৈরি হয়েছে, তেমনি ছোট ছোট খামারও কিন্তু গড়ে উঠেছে। সেটি অস্বীকার করা যাবে না।

অন্যদিকে, রান্না করা ও প্রক্রিয়াজাত মাংস সৌদি আরবে রপ্তানির উদ্যোগ নিয়েছে ‘বেঙ্গল মিট’। গত বছর সৌদি ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অথরিটির (এসএফডিএ) চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসারের কাছে রপ্তানিতে সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দেয় প্রতিষ্ঠানটি। চলতি বছর সৌদির রিয়াদে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে বেঙ্গল মিটকে জানানো হয়, এ বিষয়টি এসএফডিএ বিবেচনা করছে।

সার্বিক বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদ জাগো নিউজকে বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চিঠি দিলেও বরাবরই মাংস আমদানির বিষয়ে আমাদের সম্মতি ছিল না বা থাকবেও না। এখনো বলছি, আমরা মাংসে স্বয়ংসম্পূর্ণ। রপ্তানি করবো এখন। প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘বেঙ্গল মিট’ মাংস রপ্তানি করতেই পারে। কিন্তু আমরা সেটি সরকারিভাবেও করতে চাচ্ছি। এজন্য আমাদের কিছু কার্যক্রমও আছে। অনেকেই কিন্তু আমাদের কাছে চাইছে। মাংসজাত পণ্য যাতে রপ্তানি করতে পারি সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।

 

বাংলা গেজেট/এমএএইচ


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর