[email protected] শনিবার, ২৩শে নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে যাওয়া এক কলেজ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

প্রকাশিত:
১১ আগষ্ট ২০২৩, ২৩:৪৮

ছবি: সংগৃহীত

একদিন বাংলাদেশ থেকে প্রযুক্তি খাতের জন্য জনবল চাইবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। এ দেশ হয়ে ওঠবে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার। তাই তথ্যপ্রযুক্তি খাতের শিক্ষার প্রসার দ্রুত ঘটানো জরুরি। তবেই সামনের দিনগুলোতে আগামী প্রজন্ম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তথ্যপ্রযুক্তি ও বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণায় নেতৃত্ব দিতে পারবে। এতে কর্মসংস্থান বাড়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিও বাড়বে। সেই স্বপ্ন নিয়ে ২০১৬ সালে রাজশাহী কলেজে চালু করা হয়েছে শেখ রাসেল ডিজিটাল আইসিটি ল্যাব। যেখানে এখন পর্যন্ত ৮ হাজারেরও শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ নিয়েছে। করেছে নিজেদের আত্ম উন্নয়ন। ডিজিটাল প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে গেছে কলেজের চিত্র।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষায়িত কম্পিউটার ও ভাষা প্রশিক্ষণ ল্যাব স্থাপনের মাধ্যমে শিক্ষায় আইসিটি ব্যবহারের সুযোগ, শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি এবং সফটওয়্যারভিত্তিক ভাষা শিক্ষার প্রয়োজনীয় অবকাঠামো স্থাপনের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ প্রদান ও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব।

কলেজ প্রশাসন বলছে, দেশের অন্যন্য কলেজগুলোর মধ্যে সবসময় ভিন্ন পথে চলে রাজশাহী কলেজ। কলেজের মনোরম পরিবেশের পাশাপাশি আছে একটি ডিজিটাল আইসিটি ল্যাব। এই ল্যাবে ২১ দিনের কোর্স করানো হয়, যা আইসিটি প্রশিক্ষণ করা বাবদ কোন টাকা দিতে হয় না। কলেজ অর্থায়নে এই কোর্স করানো হয়। শিক্ষার দিক দিয়ে যেমন রাজশাহী কলেজ সবার উপরে, আইসিটি প্রশিক্ষণ দিক থেকেও সবার উপরে কলেজটি। রাজশাহী কলেজ রাসেল আইসিটি ল্যাবটি ২০১৬ সালে চালু হয়। সেই থেকে কলেজের শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এই প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা আবার প্রশিক্ষণ দিতে পারে। এই কোর্স শেষ হলে সবাইকে কলেজ পক্ষ থেকে সরকার অনুমোদিত সার্টিফিকেট দেয়া হয়। শেখ রাসেল ডিজিটাল আইসিটি ল্যাবের সাথে আরও তিনটি ল্যাব যোগ আছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাব, শিক্ষার মান উন্নয়নের প্রজেক্ট ল্যাব ও জাতীয় ল্যাব। আর এই চারটি ল্যাবের সমান্নায় নামকরণ করা হয়েছে শেখ রাসেল ডিজিটাল আইসিটি ল্যাব।

আইসিটি ক্লাবের মূল উদ্দেশ্যগুলো হচ্ছে— শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি, শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের আইসিটি ক্ষেত্রে আগ্রহী করে তোলা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযোগী মানবসম্পদ হিসেবে ছাত্রছাত্রীদের গড়ে তোলা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপিত শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব সমূহের স্থায়ীভাবে সাইবার সেন্টার প্রশিক্ষণকেন্দ্র ও আইসিটি ক্লাব হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে, ফলে ইউনিয়ন পর্যায়ে পর্যাপ্ত স্থাপনের মাধ্যমে এলাকার তরুণ-তরুণীরা বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা পাচ্ছে। শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের কারণে সারা দেশে আইসিটি নির্ভর তরুণ প্রজন্ম গড়ে উঠছে।

এই ল্যাব থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া বাংলা বিভাগের ২য় শিক্ষার্থী শারমিন আক্তার সুমি বলেন, আমি এই কম্পিউটার কোর্স করার আগে আমার কম্পিউটার বিষয়ে কিছুই জানতাম না। এখন আমি ২১ দিনের কোর্সটি করার পর আমি কম্পিউটারের এখন অনেক কিছু করতে পারি। কম্পিউটার মাধ্যমে পাওয়ার পয়েন্ট, এক্সেল, মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, সিভি তৈরিসহ বিভিন্ন কাজ নিজে নিজেই করতে পারি।

অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. সামসুল আলম মামুন বলেন, আমার নিজের কম্পিউটার আছে। তারপরও আমি কম্পিউটার বিষয়ে কিছু জানতাম না। এই কম্পিউটার কোর্স করার পর আমার কম্পিউটার বিষয়ে এখন অনেক ধারণা হয়েছে। আমি এখন কম্পিউটারে অনেক কিছু কাজ করতে পারি।

শেখ রাসেল ডিজিটাল আইসিটি ল্যাবের দায়িত্বরত শিক্ষক মো. মহিউদ্দিন (লাইব্রেরিয়ান) বলেন, ২০১৬ সালে সরকারের পক্ষ থেকে ১৬ জন শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ল্যাপটপ আরেকটি প্রজেক্টর সঙ্গে একটি মনিটর দেওয়া হয়। রাজশাহী কলেজ এই ল্যাবটিকে আরও সমৃদ্ধ করতে প্রথম পর্যায়ে ২৫টা পরে ৩০টা কম্পিউটার যোগ করে। মূল প্রজেক্ট থেকে ১৭টি কম্পিউটার পাওয়া যায়। বর্তমানে এখন শেখ রাসেল ল্যাবে ১৫০টি কম্পিউটার আছে। প্রতি বিভাগ থেকে সাতজন করে শিক্ষার্থী নেওয়া হয়। এক ব্যাচে ১৬৮ জন শিক্ষার্থী একসঙ্গে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ করতে পারে। এখন ৪২তম ব্যাচ চলছে। ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৮ হাজার শিক্ষার্থী এই প্রশিক্ষণ নিয়েছে।

তিনি বলেন, নতুন প্রজন্ম যত বেশি তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার জানবে দেশ তত তাড়াতাড়ি বিপ্লবের দিকে একধাপ এগিয়ে যাবে, প্রযুক্তি নির্ভর দেশ গড়তে সরকার সমস্ত কিছুর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, প্রযুক্তি নির্ভরশীল দেশ গড়ে তুলতে পারলেই ছাত্র-ছাত্রীরা ঘরে ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাজ করে টাকা ইনকাম করতে পারবে। কলেজের এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে হাজারো শিক্ষার্থী তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা শিখছে। একই গ্রামের বাসিন্দার মত করে সামষ্টিক অসুবিধা মোকাবিলা করে সুবিধাগুলো গ্রহণ করে থাকি। মূলতঃ সারা বিশ্বের অপার সম্ভাবনার সুবিধাকে ধারণ করতে আমাদেরকে অবশ্যই তথ্য-প্রযুক্তিতে সক্ষম থাকতে হবে। অন্যান্য শিল্প বিপ্লবের সাথে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রধান পার্থক্য হচ্ছে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শিল্প বিপ্লব শুধুমাত্র মানুষের শারীরিক পরিশ্রমকে প্রতিস্থাপন করেছে; কিন্তু চতুর্থ শিল্প বিপ্লব শুধুমাত্র শারীরিক নয়, মানসিক পরিশ্রমকেও প্রতিস্থাপন করবে।

রাজশাহী কলেজে অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহা. আব্দুল খালেক বলেন, এগিয়ে চলা বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে তথ্যপ্রযুক্তি খাত। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে ২০০৯ সালে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে বর্তমান সরকার। বৈশ্বিক মহামারি করোনা সংকটে যখন গোটা বিশ্ব বিচ্ছিন্ন, মানুষের পাশে মানুষ আসার সুযোগ নেই সে সময় মানুষের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হয়েছিল ইন্টারনেট। ডিজিটাল প্রযুক্তি কল্যাণে দেশের জনগণ করোনা মহামারিতেও সচেতন রাখতে পেরেছে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধ ও মোকাবিলায় সতর্ক বার্তা প্রচারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে প্রযুক্তি। দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলেও পৌঁছে গেছে ডিজিটাল সেবা। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসেই ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে সেবা নিচ্ছে মানুষ।

তিনি বলেন, শুধু এই শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব থেকেই কম্পিউটার কোর্স করানো হয় না কলেজের নিজ অর্থায়নে কয়েকটা বিভাগেও কম্পিউটার কোর্স করানো হয়। তবে মূল কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব থেকেই। এই ল্যাবে কলেজের সকল শিক্ষার্থী কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিতে পারে। শিক্ষার্থীরা এই প্রশিক্ষণ নিয়ে ক্যারিয়ার উন্নতি করতে করছে। শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব থেকে যে কয়টা কম্পিউটার দিয়েছে সেগুলো এখন নষ্ট হওয়ার পথে। সেগুলো এখন মেরামত করে আমরা চালাচ্ছি। প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবসার মাধ্যমে দেশ-বিদেশ থেকে অর্থ উপার্জন করছেন আমাদের শিক্ষার্থীরা।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর