প্রকাশিত:
১ অক্টোবার ২০২৩, ২২:২৭
জনবল সংকটে ধুঁকছে বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন দফতর, সংস্থা ও কোম্পানিগুলো। ১৬ প্রতিষ্ঠানে ১০ হাজার ৪৩৬টি পদ শূন্য পড়ে রয়েছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা রয়েছে প্রধান বিদ্যুৎ পরিদর্শকের দফতর।
প্রতিষ্ঠানটির ৭২ শতাংশ পদই শূন্য পড়ে রয়েছে। দফতরটির মূল দায়িত্ব হচ্ছে বিদ্যুৎ সঞ্চালণ, বিতরণ, সরবরাহ ও ব্যবহারের প্রতিটি ক্ষেত্রে জনজীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে নিরাপদ বিদ্যুৎ ব্যবহার নিশ্চিত করা। মাত্র ২৮ শতাংশ লোকবল দিয়ে খুঁড়িয়ে চলছে দফতরটির কার্যক্রম।
মিশন হচ্ছে ‘জন নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে শিল্প কল-কারখানাসহ ৫০কিলোওয়াট বা তদুর্ধ্ব ক্ষমতাসম্পন্ন সকল উচ্চ ও মধ্যম চাপের নতুন বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্র ও স্থাপনা পরিদর্শন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষান্তে বিদ্যুৎ সংযোগের অনুমোদন প্রদানের পাশাপাশি বৈদ্যুতিক কাজে পেশাজ্ঞান সম্পন্ন উপযুক্ত ঠিকাদার, প্রকৌশলী ও ইলেকট্রিশিয়ানদের চিহ্নিতপূর্বক তাদের অনুকূলে বৈদ্যুতিক ঠিকাদারি লাইসেন্স, সুপারভাইজারী সার্টিফিকেট ও কারিগরি পারমিট ইস্যুকরণ।
বলা চলে পুরো নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায় দায়িত্ব যাদের উপর নির্ভর করছে। মাঠ পরিদর্শন থাকলো দূরের কথা অফিসিয়াল কার্যক্রম পরিচালনাই দূরহ হয়ে পড়েছে জনবল সংকটে।
প্রধান বিদ্যুৎ পরিদর্শকের দফতরের সিনিয়র বিদ্যুৎ পরিদর্শক ও সদস্য সচিব প্রকৌশলী মো. আতোয়ার রহমান মোল্লা বার্তা২৪.কম-কে বলেছেন, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। নিচের দিকে ৪৪টি পদে নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড থেকে একজনকে প্রেষণে দেওয়া হয়েছে। অবশিষ্ট শূন্যপদ পরণ করতে হলে নিয়োগ বিধিমালা অনুমোদিত হতে হবে। আমরা ১ বছর আগে নিয়োগ বিধি বিদ্যুৎ বিভাগে প্রেরণ করেছি। সেই ফাইল চলতি মাসের শুরুতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় হয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে গেছে। আমরা যোগাযোগ করেছিলাম, তারা বলেছে প্রায় তিন-শতাধিক ফাইল পড়ে রয়েছে, ধারাবাহিকভাবে এগুলো শেষ করা হবে।
প্রধান বিদ্যুৎ পরিদর্শকের দফতরের পরেই রয়েছে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড। কোম্পানিটির অনুমোদিত পদের বিপরীতে মাত্র ৩৩ শতাংশ জনবল রয়েছে। জনবল কাঠামো অনুযায়ী ৫৭৫ পদের বিপরীতে লোকবল রয়েছে মাত্র ১৮৯ জন। আর পদ শূন্য রয়েছে ৩৮৬টি।
বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিলে অনুমোদিত জনবলের সংখ্যা রয়েছে ৫৫টি। এরমধ্যে মাত্র ২৫টি পদে লোকবল রয়েছে, শূন্য পড়ে রয়েছে ৩০টি পদ। অর্থাৎ ৫৫ শতাংশ পদ খালি রয়ে গেছে গবেষণা কাউন্সিলের। বি-আর পাওয়ারজেন লিমিটেডে ৩০৯টি পদের বিপরীতে ২১৭ জন লোকবল রয়েছে। শূন্য পড়ে রয়েছে ৯২টি পদ। ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশে (ইজিসিবি) ৫৭২ পদের বিপরীতে শূন্য পড়ে রয়েছে ৬৫টি। বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো বিদ্যুৎ উৎপাদন হাব আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি (এপিএসসিএল) । বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অধীন থেকে পৃথক কোম্পানিতে রূপান্তরিত এপিএসসিএল’র লোকবল রয়েছে মাত্র ৮২৮ জন। আর শূন্য পড়ে রয়েছে ৫৫৫টি।
বিদ্যুৎ খাতের সবচেয়ে পুরনো এবং বড় প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। এক সময় একক আধিপত্য থাকলেও, এখন তাকে ভেঙে অনেকগুলো বিতরণ, উৎপাদন ও একটি সঞ্চালন কোম্পানি গঠন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে বিতরণের দায়িত্বে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে এখনও পাইকারি বিদ্যুতের একক ক্রেতা ও বিক্রেতা হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে বিপিডিবি। আবার বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার তার হাতেই রয়েছে। বিপিডিবিতে ৫ হাজার ১০৭টি পদ শূন্য পড়ে রয়েছে। ১৭ হাজার ৫৮৪টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে লোকবল রয়েছে মাত্র ১১ হাজার ৮৮৩ জন। তবে এই প্রতিষ্ঠানটির যেহেতু কর্ম এলাকা কমে এসেছে তাই বিষয়টিকে জরুরি বিবেচনা করেন না অনেকেই।
নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার, আবাসিক, বাণিজ্যিক ও শিল্পখাতে জ্বালানি সাশ্রয়, সংরক্ষণ ও দক্ষ ব্যবহারের মাধ্যমে জ্বালানির অপচয় রোধকল্পে ২০১২ সালে টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা) গঠন করা হয়। ২০১৪ সালের মে মাসে স্রেডার কার্যক্রম শুরু হয়। অতিরিক্ত সচিব পদ মর্যাদায় সংস্থাটির শীর্ষ কর্মকর্তার পদবী হচ্ছে চেয়ারম্যান। নাম, কাজ ও উদ্দেশ্যে বিশাল হলেও বাস্তবতায় খুবই অনালোচিত সংস্থাটি। অনুমোদিত পদ রয়েছে মাত্র ৪০টি, তারমধ্যে ১০টি এখনও শূন্য পড়ে রয়েছে। পরিচালক ১টি ও উপ-পরিচালক ১টি পদের বিপরীতে প্রেষণে নিয়োগ দেওয়ার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে স্রেডা। এখন পর্যন্ত সাড়া মেলেনি।
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) অনুমোদিত পদ রয়েছে ৫ হাজার ৭১৮টি। শূন্য পদের সংখ্যা রয়েছে ৩৪৫ টি। কোম্পানিটিতে সরাসরি নিয়োগযোগ্য পদ রয়েছে ৮৫টি। ঢাকার আরেক বিতরণ কোম্পানি ডেসকোর ( ঢাকা ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি) ২২১১টি পদের বিপরীতে শূন্য রয়েছে ২২১টি। পদোন্নতিযোগ্য ১১৪ জনকে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাওছার আমীর আলী বলেছেন, শূন্যপদে লোকবল নিয়োগ প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। পদোন্নতির জন্য যোগ্য না হওয়ায় ১১৪ জনকে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যোগ্য হলেই তাদের পদোন্নতি দেওয়া হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, লোকবল ঘাটতি থাকায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংকট হয়, অনেকের উপর বাড়তি চাপ হয়ে যায়। আমাদের সেবার পরিধি বেড়েছে, বছরে ১ লাখের উপরে গ্রাহক বাড়ছে। আগে ছিল ১৬টি ডিভিশন এখন ২৪টি ডিভিশনে উন্নীত করা হয়েছে।
ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) ২০১১ পদের বিপরীতে শূ্ন্য রয়েছে ৪৮৬টি। নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) ২৬১৯ অনুমোদিত পদের বিপরীতে শূন্য রয়েছে ৫৩৫টি। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বাপবিবো) পদ শূন্য রয়েছে ২৬৬টি। দেশের একমাত্র সঞ্চালন কোম্পানি পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশ (পিজিসিবি) এর ৪৬৭৭টি পদের বিপরীতে লোকবল রয়েছে মাত্র ৩২৭৩জন।
বিদ্যুৎ বিভাগের অন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় শূন্য পদে জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জন্য তাগাদা দিয়েছেন সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান।
বাংলা গেজেট/এমএএইচ
মন্তব্য করুন: