[email protected] শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ই আশ্বিন ১৪৩১

উল্টো পথে লিগ্যাসি ফুটওয়্যার

অর্থনীতি ডেস্ক

প্রকাশিত:
১৭ সেপ্টেম্বার ২০২৩, ০২:০৭

ফাইল ছবি

মূল্য সংবেদনশীল তথ্য গোপন করে সাধারণ শেয়ার ইস্যুর তথ্য বেরিয়ে আসার পর এখন ধারাবাহিকভাবে কমছে লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের শেয়ার দাম। গেল এক সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ার দাম ২১ শতাংশের ওপরে কমেছে। এর আগে কোম্পানিটির শেয়ার দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ে। সাম্প্রতিক সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়ে তিনগুণের বেশি হয়ে যায়।

কোম্পানিটির শেয়ার দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ার বিষয়ে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে একাধিকবার সতর্কাবার্তা প্রকাশ করা হলেও দাম বাড়ার ধারা অব্যাহত থাকে। এর মধ্যেই গত ১২ সেপ্টেম্বর ডিএসই থেকে জানানো হয় তিনজন উদ্যোক্তা ও পরিচালক এবং ১৪ জন শেয়ারহোল্ডারের কাছে ১০ টাকা করে ৩ কোটি সাধারণ শেয়ার ইস্যু করেছে চামড়া খাতের এ কোম্পানিটি।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থেকে অনুমোদ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি এ শেয়ার ইস্যু করলেও তার মূল্য সংবেদনশীল তথ্য বা পিএসআই প্রকাশ করা হয়নি। ডিএসই থেকে এ তথ্য প্রকাশ হওয়ার পরই পতনের মধ্যে পড়ে কোম্পানিটির শেয়ার। ধারাবাহিক শেয়ার দাম কমায় গেল সপ্তাহে ডিএসইতে দাম কমার শীর্ষ স্থানটিও দখল করেছে কোম্পানিটি।

গত সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার দাম কমেছে ২১ দশমিক ৪৪ শতাংশ। টাকার অঙ্কে প্রতিটি শেয়ারের দাম কমেছে ২৫ টাকা ৯০ পয়সা। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে কোম্পানিটির শেয়ার দাম দাঁড়িয়েছে ৯৪ টাকা ৯০ পয়সা, যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে ছিল ১২০ টাকা ৮০ পয়সা।

এ দরপতনের আগে কোম্পানিটির শেয়ার দাম অস্বাভাকি বাড়তে দেখা যায়। গত ১ মার্চ লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৩৯ টাকা। সেখান থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বেড়ে ১০ এপ্রিল প্রতিটি শেয়ারের দাম ৯৭ টাকা ৭০ পয়সায় ওঠে। এরপর কিছুটা মূল্য সংশোধন হয়ে ৬৫ টাকা ৯০ পয়সায় নেমে আসে। এ মূল্য সংশোধনের পর আবার হু হু করে বাড়তে থাকে কোম্পানিটির শেয়ার দাম। এতে দেখতে দেখতে প্রতিটি শেয়ারের দাম ১০০ টাকায় উঠে যায়।

এমন অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষের কাছে কয়েক দফায় নোটিশ পাঠায় ডিএসই কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ গত ২৩ মে ডিএসই থেকে বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে সতর্কবার্তা প্রকাশ করা হয়। ওই সতর্কবার্তায় বলা হয়- লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানিটি কর্তৃপক্ষকে নোটিশ করা হয়। জবাবে কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে- সম্প্রতি শেয়ারের যে দাম বেড়েছে এবং লেনদেন বেড়েছে তার পেছনে কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই।


ডিএসই থেকে যখন এ সতর্কবার্তা প্রকাশ করা হয়, সে সময় লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৯০ টাকা ৩০ পয়সা। এরপর দাম বাড়ার প্রবণতা আরও বেড়ে ৬ আগস্ট প্রতিটি শেয়ারের দাম ১৩৬ টাকা ৫০ পয়সায় ওঠে।

এরপর আবার কিছুটা মূল্য সংশোধন হয়। ১৬ আগস্ট প্রতিটি শেয়ারের দাম ১০১ টাকা ৫ পয়সায় নেমে আসে। এরপর আবার দাম বাড়তে দেখা যায়। ৫ সেপ্টেম্বর লেনদেন শেষে প্রতিটি শেয়ারের দাম ১২৬ টাকা ৮০ পয়সায় দাঁড়ায়।

শেয়ারের দাম বাড়ার মধ্যেই ১২ সেপ্টেম্বর ৩ উদ্যোক্তা ও পরিচালক এবং ১৪ জন শেয়ারহোল্ডারের কাছে ৩ কোটি সাধারণ শেয়ার ইস্যুর তথ্য প্রকাশ করে ডিএসই। এর মধ্যে- রিভারস্টনের কাছে ১৯ লাখ ২৪ হাজার, কাজী রাফি আহমেদের কাছে ৮ লাখ ৯৯ হাজার ৪৬২টি, এসএসআরএ ইকুইটিজের কাছে ১৭ লাখ ২৫ হাজার, এমকে ফুটওয়্যারের কাছে ১৭ লাখ ২৫ হাজার, কাজী আজিজ আহমেদের কাছে ৫ লাখ ৩৩ হাজার, এনএএসসিএফএস ইকুইটিজের কাছে ৮১ লাখ ৫০ হাজার শেয়ার ইস্যু করা হবে।

এছাড়া কাজী নাফিজ আহমেদের কাছে ৪ লাখ ২৯ হাজার ৫৩৮টি, আহমেদ ফারাবি চৌধুরীর কাছে ২০ লাখ, নিরদ বরুয়া’র কাছে ৮ লাখ ৮০ হাজার, এসএএম ইক্যুইটিজের কাছে ১৭ লাখ ২৫ হাজার, হায়াতা ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের কাছে ১৭ লাখ ৫০ হাজার, সি পার্ল বিচ রিসোর্টের কাছে ৫ লাখ ৪৫ হাজার, এম/এস হাবিব এন্টারপ্রাইজের কাছে ১৭ লাখ ৫০ হাজার, শিরিন্তা সাবিন চৌধুরীর কাছে ৯ লাখ ৫০ হাজার, টিএস ইক্যুইটির কাছে ২২ লাখ ৫০ হাজার, মো. আমিনুল হকের কাছে ৮ লাখ ৪০ হাজার এবং এম/এস লামিয়া এন্টারপ্রাইজের কাছে ১৯ লাখ ২৪ হাজার ইস্যু করা হবে। এ সংক্রান্ত রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ২৭ সেপ্টেম্বর।

এ তথ্যপ্রকাশের পরেই কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রির বড় ধরনের চাপ আসে এবং ধারাবাহিকবাবে শেয়ার দাম কমে। অনেক বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি করে দেন। এতে সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪৪ কোটি ৪০ লাখ ৯০ হাজার টাকা। আর প্রতি কার্যদিবসে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৮ কোটি ৮৮ লাখ ২০ হাজার টাকা।

শেয়ারের এমন দাম বাড়া কোম্পানিটি ২০০০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ২০২২ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরের জন্য কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে ২০২১ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরের জন্য কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়। তার আগে ২০২০ সালে কোম্পানিটি কোনো লভ্যাংশ দেয়নি।

এদিকে ২০২২-২৩ হিসাব বছরের প্রথম নয় মাসের ব্যবসায় কোম্পানিটি লোকসান করেছে। ২০২২ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত নয় মাসের ব্যবসায় শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৯০ পয়সা।

১৩ কোটি ৮ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের এ কোম্পানিটির শেয়ার সংখ্যা ১ কোটি ৩০ লাখ ৭৯ হাজার ৯৮০টি। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ আছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ৪৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ শেয়ার আছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ২০ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের পরেই গত সপ্তাহে দাম কমার তালিকায় ছিল ফু-ওয়াং ফুড। সপ্তাহজুড়ে এই কোম্পানিটির শেয়ার দাম কমেছে ১৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ। ১৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ দাম কামার মাধ্যমে পরের স্থানে রয়েছে খান ব্রাদার পিপি ওভেন ব্যাগ।

এছাড়া গত সপ্তাহে দাম কমার শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় থাকা- সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালসের ১০ দশমিক ৫৩ শতাংশ, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের ১০ দশমিক ৩৮ শতাংশ, ইয়াকিন পলিমারের ১০ দশমিক ২৪ শতাংশ, অলিম্পিক এক্সেসরিজের ১০ দশমিক ১৭ শতাংশ, এমারেল্ড অয়েলের ৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ, দেশবন্ধু পলিমারের ৭ দশমিক ৮৭ শতংশ এবং ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোডের ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ দাম কমেছে।

 

বাংলা গেজেট/এমএএইচ


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর