প্রকাশিত:
৮ সেপ্টেম্বার ২০২৩, ১৬:৪৩
তিন দিনের সফরে আজ শুক্রবার দুপুরে ভারতের নয়াদিল্লিতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী এ সফর করবেন।
আজ নয়াদিল্লি পৌঁছার পর সন্ধ্যায় ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে নরেন্দ্র মোদি ও শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসবেন। সেই বৈঠক শেষে দুই দেশের মধ্যে তিনটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সইয়ের কথা রয়েছে।
এগুলো হলো—দুই দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে লেনদেনের সরলীকরণ (রুপি ও টাকায় বিনিময়), কৃষি গবেষণা খাতে সহযোগিতা ও সাংস্কৃতিক বিনিময়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বৃহস্পতিবার ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। নয়াদিল্লিতে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠকে বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গ আসবে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি না। আমরা যেটি চাই তা হালো আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা।’
পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন সম্প্রতি বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির প্রসঙ্গ তুলবে বাংলাদেশ। তবে এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, তিস্তার বিষয়ে তিনি অবগত নন। তবে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির বিষয়ে আলোচনা চলছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, স্থিতিশীলতাসহ দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে। নয়াদিল্লি থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে, আগামীকাল শনিবার জি২০ সদস্য ও অতিথি রাষ্ট্রের নেতাদের সম্মানে আয়োজিত নৈশ ভোজে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও তাঁর সাক্ষাৎ হতে পারে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ভারতের সভাপতিত্বে জি২০ শুরু হয়েছিল ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এবং সভাপতিত্বের এই মেয়াদে ভারত বাংলাদেশসহ মোট ৯টি দেশকে সব জি-২০ বৈঠকে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানায়। এই দেশগুলো হলো বাংলাদেশ, মিসর, মরিশাস, নেদারল্যান্ডস, নাইজেরিয়া, ওমান, সিঙ্গাপুর, স্পেন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
মোমেন বলেন, ঢাকা ও নয়াদিল্লির মধ্যে অনন্য সম্পর্কের কারণে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ হিসেবে এই সুযোগ পেয়েছে। এটি বাংলাদেশের জন্য গর্বের বিষয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারত আয়োজিত ১৮তম জি২০-এর সব বৈঠকেই বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করছে। বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের অবস্থান ও সুপারিশ উপস্থাপন করছে। আয়োজক দেশ ভারতসহ অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর প্রশংসা অর্জন করেছে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক অবিশ্বাস্য গতি পেয়েছে, যাকে সম্পর্কের ‘সোনালি অধ্যায়’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। জি২০ সম্মেলনে অংশগ্রহণ হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে গত ১৪ বছরে সরকারের উল্লেখযোগ্য সাফল্যের স্বীকৃতি।
মোমেন বলেন, আগামীকাল শনিবার জি২০ সম্মেলনের প্রথম দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন অধিবেশনে যোগ দেবেন। তিনি শীর্ষ সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’-এর ওপর দুটি ভাষণ দেবেন।
মোমেন বলেন, ‘এক বিশ্ব’ ও ‘এক পরিবার’ সেশনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তন, কভিড মহামারির পরে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, ইউরোপে যুদ্ধের ফলে জ্বালানি, খাদ্য ও সারের মতো প্রয়োজনীয় পণ্যের বৈশ্বিক সরবরাহের মারাত্মক ব্যাঘাতের চ্যালেঞ্জ কিভাবে মোকাবেলা করা যায় তা তুলে ধরবেন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী বর্তমান সরকারের মেয়াদে বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভাবনীয় সাফল্যের অভিজ্ঞতা অংশগ্রহণকারী বিশ্বনেতাদের কাছে তুলে ধরবেন।
জি২০ নেতাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল জি২০ সম্মেলনের ফাঁকে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স ও প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ বিন সালমান আল সৌদ, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো অ্যাঞ্জেল ফার্নান্দেজ, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
সম্মেলনের ঘোষণাপত্র গ্রহণ অনুষ্ঠান
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আগামী রবিবার নয়াদিল্লিতে জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের দ্বিতীয় ও শেষ দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্যান্য দেশের নেতাদের সঙ্গে রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এরপর তিনি সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে অংশ নেবেন।
সম্মেলনের শেষ দিনে ‘জি২০ নেতাদের নয়াদিল্লি ঘোষণাপত্র’ গৃহীত হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন আশা প্রকাশ করেন যে এটি বাংলাদেশের জন্য একটি অনন্য অভিজ্ঞতার পাশাপাশি বাংলাদেশ ও ভারতের গভীর সম্পর্কের জন্য একটি মাইলফলক হবে। সফর শেষে রবিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় ফিরবেন।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ আগামী রবিবার বিকেলে ঢাকায় পৌঁছবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানাবেন। সূত্র: কালের কণ্ঠ
বাংলা গেজেট/বিএম
মন্তব্য করুন: