প্রকাশিত:
৭ সেপ্টেম্বার ২০২৩, ০৩:৫৪
মন্দা কাটিয়ে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফেরার ইঙ্গিত দিচ্ছে দেশের শেয়ারবাজার। গত কয়েক কার্যদিবস ধরে মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে লেনদেনের গতি। দুইশ কোটি টাকার ঘরে নেমে যাওয়া লেনদেন বেড়ে ৭০০ কোটি টাকার ঘরে উঠে এসেছে। বাজারের এ পরিস্থিতিতে নতুন নতুন বিনিয়োগকারীও আসছেন।
গত এক মাসে সাড়ে চার হাজারের বেশি বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব বেড়েছে। বিও হলো শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য ব্রোকারেজ হাউজ অথবা মার্চেন্ট ব্যাংকে একজন বিনিয়োগকারীর খোলা হিসাব। এই বিও হিসাবের মাধ্যমেই বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারে লেনদেন করেন। বিও হিসাব ছাড়া শেয়ারবাজারে লেনদেন করা সম্ভব নয়।
নতুন করে যেসব বিও হিসাব খোলা হয়েছে তার পুরোটাই দেশিও বিনিয়োগকারীদের। এরমধ্যে যেমন পুরুষ বিনিয়োগকারী রয়েছেন তেমনি রয়েছেন নারী বিনিয়োগকারী। সেই সঙ্গে কোম্পানির বিও হিসাবের সংখ্যাও বেড়েছে। তবে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা কমেছে।
এদিকে সম্প্রতি শেয়ারবাজারে নতুন বিনিয়োগকারী আসলেও জুলাই মাসে ১ লাখের বেশি বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজার ছেড়ে চলে যান। শুধু জুলাই মাসেই ১ লাখ ১৭ হাজার ৭৪৯টি বিও হিসাব বন্ধ হয়ে যায়।
চলতি বছরের জুন শেষে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাব ছিল ১৮ লাখ ৬০ হাজার ৭৭৪টি। জুলাই শেষে সেই সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ১৭ লাখ ৪৩ হাজার ২৪টি। বন্ধ হওয়া এসব বিও হিসাবের মধ্যে স্থানীয় বিনিয়োগকারী যেমন ছিলেন, তেমনি বিদেশি বা প্রবাসী বিনিয়োগকারীরাও ছিলেন। পাশাপাশি কোম্পানির বিও হিসাবও ছিল।
এক মাসে লাখের অধিক বিও হিসাব বন্ধ হওয়ার পর আগস্টের শুরু থেকেই আবার বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব বাড়তে থাকে। এই বিও হিসাব বাড়ার ধারা আগস্ট মাসজুড়েই অব্যাহত থাকে। তবে সেপ্টেম্বরে এসে বিও হিসাব বাড়ার প্রবণতা কিছুটা বেড়ছে। চলতি মাসের তিন কার্যদিবসেই প্রায় এক হাজার বিও হিসাব বেড়েছে।
সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশ (সিডিবিএল)-এর তথ্য অনুযায়ী, ৫ সেপ্টেম্বর শেষে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৪৭ হাজার ৬২১টি। এ হিসাবে আগস্ট মাস ও সেপ্টেম্বরের পাঁচ দিনে বিও হিসাব বেড়েছে ৪ হাজার ৫৯৭টি।
সিডিবিএল’র তথ্য মতে, বর্তমানে পুরুষ বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব আছে ১৩ লাখ ৬ হাজার ৯০১টি। জুলাই শেষে এই সংখ্যা ছিল ১৩ লাখ ৪ হাজার ৩৭২টি। অর্থাৎ পুরুষ বিনিয়োগকারীদের হিসাব বেড়েছে ২ হাজার ৫২৯ টি।
অন্যদিকে বর্তমানে নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২৩ হাজার ২৫২টিতে। জুলাই শেষে এ সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ২২ হাজার ৩০১টি। এ হিসাবে নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব বেড়েছে ৯৫১টি।
এদিকে বর্তমানে কোম্পানি বিও হিসাব রয়েছে ১৬ হাজার ৪৬৮টি। জুলাই শেষে এই সংখ্যা ছিল ১৬ হাজার ৩৫২টি। সে হিসাবে কোম্পানি বিও হিসাব বেড়েছে ১১৬টি।
সিডিবিএল’র তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশি বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব আছে ১৬ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮৬টি। যা জুলাই শেষে ছিল ১৬ লাখ ৭১ হাজার ১৯৯টি। অর্থাৎ দেশি বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব বেড়েছে ৪ হাজার ৪৮৭টি।
অন্যদিকে বর্তমানে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব আছে ৫৫ হাজার ৪৬৭টি। গত জুলাই শেষে এই সংখ্যা ছিল ৫৫ হাজার ৪৭৪টি। অর্থাৎ এক মাসে মাসে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব কমেছে ৭টি। এর আগে জুলাই মাসে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব কমে ৫ হাজার ৯৭৩টি।
বাজার পরিস্থিতি
রাজনৈতিক উত্তাপ ও নানান ধরনের গুজবে জুলাই ও আগস্ট মাসের প্রায় সময়জুড়েই শেয়ারবাজারে মন্দাভাব দেখা যায়। ধারাবাহিকভাবে মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি লেনদেনের গতিও কমে আসে। হাজার কোটি টাকার ওপরে থাকা লেনদেন মাত্র দুইশ কোটির ঘরে নেমে যায়। তবে আগস্টের শেষ সপ্তাহে এসে শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
পতন থেকে বেরিয়ে বেশরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম যেমন বাড়ে, তেমনি বাড়ে মূল্যসূচক। সেই সঙ্গে লেনদেনের গতিও বাড়ে। শেষ কার্যদিবসে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৭৩৪ কোটি ৩০ লাখ টাকার লেনদেন হয়। এর মাধ্যমে চলতি বছরের ২৩ জুলাইয়ের পর বাজারটিতে আবারও সাতশ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হলো। সেই সঙ্গে শেষ ৯ কার্যদিবসের মধ্যে ৭ কার্যদিবসেই সূচক বেড়েছে।
বাংলা গেজেট/এমএএইচ
মন্তব্য করুন: