[email protected] শনিবার, ২৩শে নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ড্রাগন চাষে ইসমাইলের সাফল্য, বছরে আয় কোটি টাকা!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত:
৮ আগষ্ট ২০২৩, ০৭:৫৮

ড্রাগন খেত পরিচর্যায় বাগানি ইসমাইল হোসেন।

বরেন্দ্র ভূমিতে বিদেশি ফল ড্রাগন চাষ করে সফলতার দেখা পেয়েছেন রাজশাহীর ইসমাইল হোসেন। রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কের পাশে গোদাগাড়ী উপজেলার সোনাদীঘির মোড় এলাকায় ৫ একর (১৫ বিঘা) জমিতে গড়ে তুলেছেন বিশাল ড্রাগন বাগান। চারা রোপণের বছর না পেরোতেই দেখা পেয়েছেন ফলনের। নিয়মিত পরিচর্যায় সম্ভাবনার দাঁড় খুলেছে এই কৃষি উদ্যোক্তার।

জানা যায়, রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার পিরিজপুর এলাকার বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন। ২০২১ সালে এক একর (৩ বিঘা) জমিতে ড্রাগন চাষ শুরু করেন তিনি। দীর্ঘ ১৭ বছরের ভোজ্যতেলের ব্যবসা ছেড়ে হয়ে যান কৃষি উদ্যোক্তা। প্রথম বছরেই প্রায় ২০ থেকে ২২ লাখ টাকার ফল বিক্রি করেন।

ড্রাগন চাষের প্রাথমিক ধাপে ভালো ফলন পেয়ে সিদ্ধান্ত নেন পরিসর বাড়ানোর। এক বছরের মাথায় ৪ একর জমি লিজ নেন ইসমাইল। বছর না পেরোতেই সেখানেও ফলন পেতে শুরু করেছেন তিনি। প্রতি সিজনে এক একর জমিতে ২২ থেকে ২৫ লাখ টাকার ফল বিক্রি হয় অনায়াসেই। সেই হিসেবে ৫ একর জমিতে বছরে কোটি টাকার ড্রাগন বিক্রির বাণিজ্যিক সম্ভাবনা দেখছেন এই চাষী।

এ বিষয়ে ইসমাইল হোসেন বলেন, ড্রাগন আবাদে আসল কথা লস নাই, লাভজনক একটা আবাদ। এই আবাদ করলে ইনশাআল্লাহ কিছু করতে পারবে। এক বিঘা ড্রাগন বাগানে ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা খরচ করলেই সে ফল দেখতে পারবে। যদি ভালোভাবে আবাদ করতে পারে তবে প্রতি বিঘায় মোটামুটি ৮০ থেকে ১০০ মণ ফলন পাওয়া যায়। ১০০ টাকা করে কেজি বিক্রি করলেও ড্রাগনে কোনো লস নাই।

তিনি আরও বলেন, এক একর জমি থেকে মোটামুটি ১০ একর জমিতে চারা বিক্রি করা হয়েছে। আমি নিজেও চার একর জমি বাড়াইছি। এটা যেন একটা টাকারই বাগান। একটা লোক যদি এক বিঘা আবাদ করে সে হাসতে হাসতে প্রতি বছরে দুই-তিন লাখ টাকা লাভ করতে পারবে।

ড্রাগন চাষের ঝুঁকি প্রসঙ্গে ইসমাইল বলেন, আমার বাগান করা মোটামুটি দুই-আড়াই বছর হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোনো রোগ-বালাইয়ের সম্মুখীন হতে হয় নি। ড্রাগনে সপ্তাহে বা ১০ দিনের মাথায় একটা পচনরোধের স্প্রে করলেই যথেষ্ট। এটা কোনো ক্ষতিকারক আবাদ নয়। ড্রাগনে রোগ-বালাইও অতো নাই।

ঝুঁকি বলতে অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে একটু ফুল-ফলের ক্ষতি হয়। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ হলে ফলন ভালোই হবে। প্রতি বছর একই রকম যাবে না। আবহাওয়ার উপরই নির্ভর করবে। সব মিলিয়ে লাভজনক আবাদ, ড্রাগনে কোনো লস নাই।

কৃষি বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করে কৃষি উদ্যোক্তা বলেন, কৃষি বিভাগের এই ড্রাগন চাষে কোনো ভূমিকাই নাই। যদি ভূমিকা থাকে, অবশ্যই কৃষকরা একটু এগিয়ে আসতে পারে। কৃষি কর্মকর্তাদের একটু ড্রাগনের ব্যাপারে নজর দেওয়া উচিত।

এই বাগান করে আমি ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়েছি, আরও কৃষকরা করুক এটা আমি চাই। যে কেউ আবাদ করতে পারে, লাভজনক আবাদ। যদি কারো কোনো সহযোগিতা লাগে সেটাও করার প্রতিশ্রুতি দেন ইসমাইল হোসেন।

বাগানের পরিচর্যাকারী নাঈম ইসলাম বলেন, গত কয়েক মাস ধরে এই বাগানে কাজ করছি। বাগানে স্প্রে ও ফল কাটার কাজ করি। এমন পরিবেশে কাজ করতে খুবই ভালো লাগে। এটা লাভজনক একটা বাগান। কেউ এই বাগান করলে জীবনে কিছু একটা করতে পারবে।

এ বিষয়ে গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মরিয়ম আহমেদ বলেন, শুধু গোদাগাড়ী উপজেলাতেই ১৯০ হেক্টর জমিতে ড্রাগন চাষ হচ্ছে। এটাকে বৃদ্ধি করতে আমাদের উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে। গোদাগাড়ীতে কিন্তু এতো ড্রাগন বাগান ছিল না।

আমাদের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়। তারপর কৃষকরা লাভবান হওয়াতে চাষটা ব্যাপক সম্প্রসারণ হচ্ছে, নতুন নতুন বাগান সৃষ্টি হচ্ছে। আর যেহেতু বরেন্দ্র মাটিতে খুবই ভালো ফলন হচ্ছে, বাজার মূল্যও ভালো, তাই কৃষকরাও খুবই আগ্রহী।

আমরা ড্রাগন চাষের প্রয়োজনীয় সকল পরামর্শ দিয়ে আসছি। কৃষি উপকরণ প্রদান বৃদ্ধির ব্যাপারে আমরা উদ্যোগ নিবো। তবে ড্রাগন চাষের প্রাথমিক খরচটাই বেশি। তারপরও বিভিন্ন প্রকল্প থেকে যতটুকু সাপোর্ট দেওয়া যায় দেওয়ার আশ্বাস দেন এই কৃষি কর্মকর্তা।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, কৃষি বিভাগ উৎসাহিত করার ফলে ড্রাগান চাষ আজকের অবস্থানে এসেছে। আর ড্রাগনের বাজারও ভালো, অনেক ধরনের সুবিধা আছে। চাষাবাদ বৃদ্ধিতে আগ্রহী করতে পরামর্শ প্রদান অব্যাহত রয়েছে।

এমএএইচ/এফএস


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর